বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভেরিফাইড ব্যাজের গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপে ব্লু ব্যাজ থাকার মানে হলো ব্যবহারকারী বা ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্যতা এবং পরিচিতি নিশ্চিত করা। তবে, মেটার (Meta) ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া এখন আগের তুলনায় অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। এখন আলোচনা করবো মেটা ব্লু ব্যাজ ভেরিফিকেশনের পদ্ধতি, সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিস্তারিত।
মেটা ভেরিফিকেশন পদ্ধতি
মেটায় ব্লু ব্যাজ ভেরিফিকেশন পাওয়ার দুটি মূল উপায় রয়েছে।যেমন:
১. নোটেবল (Notable) বা অথেনটিক (Authentic) ভেরিফিকেশন
নোটেবল ভেরিফিকেশন বলতে মূলত সেই ব্যক্তিদের ব্লু ব্যাজ দেওয়া হয়, যারা কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এবং যাদের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং যোগ্যতা থাকলে আবেদন করে ভেরিফিকেশন পাওয়া যায়।
নোটেবল ভেরিফিকেশন পাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন:
✔️আবেদনকারীর নাম
✔️ছবি
✔️সরকারি আইডি।
✔️জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংবাদমাধ্যমে (নিউজ পোর্টাল, টিভি চ্যানেল) ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে এমন একাধিক নিউজ আর্টিকেল।
✔️অনলাইন বা অফলাইনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব (high engagement) থাকা সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল।
সাংবাদিকদের জন্য Journalist/Creator Support বা Media Portal-এর মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে নোটেবল ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া আগের তুলনায় কঠোর হয়ে গেছে এবং শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় সেলিব্রিটি, বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থা এবং নির্দিষ্ট কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্বের জন্য এটি সহজলভ্য।
২. মেটা সাবস্ক্রিপশন ভেরিফিকেশন
মেটা সম্প্রতি একটি সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে ব্লু ব্যাজ এবং অতিরিক্ত কিছু সুবিধা পেতে পারেন।
মেটা সাবস্ক্রিপশন ভেরিফিকেশন পেতে যা প্রয়োজন:
✔️বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র (NID/Passport)।
✔️আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য উপযুক্ত ডুয়াল কারেন্সি কার্ড (Dual Currency Card)।
✔️প্রতি মাসে সাবস্ক্রিপশন ফি (প্রায় ১৪০০-৪০০০০ টাকা, স্থান ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)।
বিজনেস পেজের জন্য অতিরিক্ত শর্ত:
✔️প্রতিষ্ঠানের বৈধ নথিপত্র ও লাইসেন্স।
✔️ব্যবসার জন্য একটি অনুমোদিত ওয়েবসাইট।
✔️ফেসবুক বিজনেস ম্যানেজার (Business Manager) একাউন্ট।
✔️বিজনেস ম্যানেজার ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
মেটা সাবস্ক্রিপশন আসার পর থেকে, নোটেবল ক্যাটাগরির বাইরে অথেনটিক ভেরিফিকেশন এখন খুবই সীমিত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে।
মেটা ভেরিফিকেশনের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
সুবিধা:
✔️ নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি: ব্লু ব্যাজ থাকার ফলে আপনার প্রোফাইল বা পেজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
✔️সিকিউরিটি ও সাপোর্ট: মেটা সাবস্ক্রিপশন ভেরিফাইড একাউন্টের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা এবং সরাসরি কাস্টমার সাপোর্ট সুবিধা দেয়।
✔️ইম্প্রেশনে অগ্রাধিকার: ভেরিফাইড একাউন্ট বা পেজের পোস্ট ও কমেন্ট সাধারণ একাউন্টের তুলনায় বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়।
✔️সঠিক পরিচিতি নিশ্চিতকরণ: একই নামের একাধিক ফেক একাউন্টের সমস্যা কমে যায়।
সীমাবদ্ধতা:
⛔সাবস্ক্রিপশন ফি: মেটা সাবস্ক্রিপশনের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়, যা অনেকের জন্য বাড়তি খরচ।
⛔নোটেবল ভেরিফিকেশন কঠোর হচ্ছে: আগের তুলনায় এখন ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে নোটেবল ভেরিফিকেশন পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।
⛔সকলের জন্য নয়: শুধুমাত্র পাবলিক ফিগার, ব্যবসায়ী বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এটি কার্যকর, সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য নয়।
শেষ কথা হলো ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া এখন অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত এবং সাবস্ক্রিপশন মডেলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। নোটেবল ক্যাটাগরিতে যারা পড়েন না, তাদের জন্য মূলত মেটা সাবস্ক্রিপশনই একমাত্র উপায়।
তাই, ভেরিফাইড ব্যাজ পাওয়ার জন্য প্রতারণামূলক বা অবৈধ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ না করে, উপরোক্ত নিয়ম মেনে ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করাই শ্রেয়।
Discussion about this post